নাম পরিবর্তনের উদ্যোগ জেমস আব্দুর রহিম রানা, যশোর : শ্রুতিমধুর নয়, এমন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর বৃহস্পতিবার (০৬ আগস্ট) এমন সব বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনের জন্য সব জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, সারাদেশে এমন কিছু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম আছে যা শ্রুতিমধুর নয় এবং ভাষা ও সংস্কৃতির সাথে শোভন নয়। যা নিয়ে বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে হাস্যরসের সৃষ্টি হচ্ছে। ‘এরূপ বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে দেশের ভাষা ও সংস্কৃতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে শোভনীয় নামকরণের প্রস্তাব যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আগামী ৩০ আগস্টের মধ্যে অধিদপ্তরে পাঠানোর জন্য অনুরোধ করা হলো। ‘ এই আদেশের প্রেক্ষিতে যশোরে শ্রুতিমধুর নাম না এমন ২১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নামে তালিকা প্রস্তুত করেছে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস কর্তৃপক্ষ। নাম পরিবর্তনের জন্য এসব বিদ্যালয়ের তালিকা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরে পাঠানো হবে। সেখান থেকে বিদ্যালয়ের নাম শ্রুতিমধুর রাখা হবে বলে জানান জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার শেখ অহিদুল আলম। এ সপ্তাহের শেষের দিকে তালিকা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন জেলা সহকারি প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আমজাদ হোসেন। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্র জানায়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদফতর থেকে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে দেশের যেসব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম শ্রুতিমধুর না সেসব বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে নতুন করে নাম রাখা হবে। সে নাম হবে শিক্ষা ও সংস্কৃতির সাথে মিল রেখে শ্রুতিমধুর। এলক্ষে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের পরিচালক ( পলিসি ও অপারেশন) খালিদ আহমেদ সাক্ষরিত চিঠি এসেছে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে। সেই চিঠিতে শ্রুতিমধুর নাম না এমন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নামের তালিকা পাঠানোর আদেশ দেয়া হয়েছে। সোমবার জেলা শিক্ষা অফিস থেকে আট উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারদের সাথে জুম সভা করে তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। শ্রুতিমধুর নাম না এমন ২১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো হচ্ছে, সদরে শ্রীপদ্দি রেজিস্ট্রার প্রাথমিক বিদ্যালয়, জোত রহিম রেজিস্টার প্রাথমিক বিদ্যালয়, টিকেজি সম্মিলনী রেজিস্ট্রার প্রাথমিক বিদ্যালয়, নোঙরপুর রেজিস্ট্রার প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাথাভাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সিরাজসিংহা তরফদার পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কেশবপুরের গড়ভাঙ্গা মাঝপাড়া রেজিস্ট্রার প্রাথমিক বিদ্যালয়, নেপাকাটি রেজিস্ট্রার প্রাথমিক বিদ্যালয়, পাত্রপাড়া রেজিস্ট্রার প্রাথমিক বিদ্যালয়, অভয়নগরের আদিলপুর বিভাগদি রেজিস্ট্রার প্রাথমিক বিদ্যালয়, কলারাবাদ সদ্য জাতীয় করণকৃত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মণিরামপুরের চেৎলা ডুমুর খালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হানুয়ার কোমলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সুন্দ্রা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বিবিজি এইচ রেজিস্ট্রার প্রাথমিক বিদ্যালয়, চৌগাছার মাংগীর পাড়া রেজিস্ট্রার প্রাথমিক বিদ্যালয়, কাধবিলা ঝাউতলা রেজিস্ট্রার প্রাথমিক বিদ্যালয়, আড়ারদহ নিমতলা রেজিস্ট্রার প্রাথমিক বিদ্যালয়, কুষ্টিয়া ফতেহপুর রেজিস্ট্রার প্রাথমিক বিদ্যালয়, মশ্মমপুর রেজিস্ট্রার প্রাথমিক বিদ্যালয়, তজবীজপুর কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এ ব্যাপারে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার শেখ অহিদুল আলম জানান, শ্রুতিমধুর নাম না এমন বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করার কাজটা সরকারের একটি মহৎ উদ্যোগ। কারন শিক্ষা ও সংস্কৃতির সাথে মিল না রেখে যেসব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম রয়েছে সেগুলো পড়তে বিব্রতকর লাগে। তাই সরকার বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন কাজকে স্বাগত জানাই। তিনি বলেন, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের চিঠিতে উদাহরণ দিয়ে বলা হয়েছে যে, ইতোমধ্যে নীলফামারী জেলাধীন সদর উপজেলার মানুষমারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে মানুষগড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় করা হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (যুগ্মসচিব) খালিদ আহম্মেদ স্বাক্ষরিত চিঠি প্রাথমিক শিক্ষার ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর, খুলনা, সিলেট, বরিশাল ও ময়মনসিংহ বিভাগীয় উপপরিচালকেও পাঠানো হয়। সারাদেশে অনেক স্কুলের নাম নিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় রয়েছে সরকার। গত ৩ ফেব্রুয়ারি ‘মানুষমারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’র নাম পরিবর্তন করে ‘মানুষগড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’ নামকরণ করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের উপসচিব জাহানারা রহমান স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বিদ্যালয়টির নাম পরিবর্তন করার কথা জানানো হয়। ওই সময় উপসচিব জাহানারা রহমান বলেন, বিদ্যালয়টির নাম পরিবর্তনের জন্য নীলফামারী জেলা প্রশাসন ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সম্মিলিতভাবে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠিয়েছিল। তার প্রেক্ষিতে স্কুলটির নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। প্রস্তাব পেলে এরকম আরও কিছু স্কুলের নাম পরিবর্তনের উদ্যোগ নেয়ার কথা জানান জাহানারা রহমান।