বাগেরহাট জেলা স্টাফ রিপোর্টারঃ সরকারি ঘর পাওয়ার আশায় দুই বছর আগে মেম্বর শ্রীবাস রায়কে পাঁচ হাজার দুইশ টাকা দিয়েছিলাম। দুই বছর হলো ঘরও দেয় না, টাকাও ফেরত দেয় না। টাকা চাইতে গেলে বলে তুই টাকা দিছিস তার প্রমাণ কি। টাকা পাবি টাকা নিবি নালিশ করলি কেন। টাকা তো পাবিই না, তোকে মেরে এলাকা ছাড়া করব।
মেম্বরের ভয়ে এখন তো এলাকায় থাকাই দায়। এদিকে পাঁচ হাজার টাকার সুদও দিয়েছি প্রায় দুই হাজার টাকা। এভাবেই স্থানীয় ইউপি সদস্য শ্রীবাস রায়ের অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার কথা বলছিলেন চিতলমারী উপজেলার সন্তোষপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা হতদরিদ্র চারুলতা শিকদার। শুধু চারুলতা শিকদার নয় ইউপি সদস্য শ্রীবাস রায়ের বিরুদ্ধে এলাকার অনেকেই একই ধরনের অভিযোগ করেছেন।
একই ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য হরেন্দ্র নাথ শিকদারের বিরুদ্ধেও একই ধরনের অভিযোগ করেছেন হতদরিদ্ররা। স্থানীয়রা জানান, শ্রীবাস রায় ও হরেন্দ্র নাথ শিকদার ইউপি সদস্য হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন সরকারি সুযোগ সুবিধা প্রদানের কথা বলে স্থানীয়দের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ করেছেন।
জমি আছে ঘর নেই, দুর্যোগ সহনীয় ঘর তৈরিসহ বিভিন্ন প্রকল্পের ঘর তৈরি করে দেওয়ার কথা বলে অর্ধ শতাধিক মানুষের কাছ থেকে পাঁচ হাজার থেকে ছয় হাজার টাকা করে হাতিয়ে নিয়েছেন এই দুই ইউপি সদস্য। হওয়া উৎকোচ হিসেবে দেওয়া টাকা ফেরত পেতে ওই দুই ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে বাগেরহাট জেলা প্রশাসক ও চিতলমারী নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা। অভিযোগে বলা হয়, ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য হরেন্দ্র নাথ শিকদার ১১ জন হতদরিদ্রকে সরকারি ঘর দেওয়ার কথা বলে পাঁচ থেকে ছয় হাজার করে টাকা নিয়েছেন।
করোনা পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর মানবিক সহায়তার তালিকায়ও একাধিক উপকারভোগীর নামের পাশে নিজের পছন্দমত লোকের নাম দিয়ে টাকা আত্মসাৎ করেছেন। ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য শ্রীবাস রায় স্থানীয় ৪ জন হতদরিদ্রের কাছ থেকে সরকারি ঘর দেওয়ার কথা বলে পাঁচ থেকে ছয় হাজার করে টাকা নিয়েছেন।
দুই বছর হয়ে গেলেও সরকারি ঘরও দেয় না, টাকাও ফেরত দেয় না। শ্রীবাস রায়ের বিরুদ্ধেও প্রধানমন্ত্রীর মানবিক সহায়তার তালিকায়ও একাধিক উপকারভোগীর নামের পাশে নিজের পছন্দমত লোকের নাম দিয়ে টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ রয়েছে। সন্তোষপুর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের দড়িউমাজুড়ি গ্রামের শংকর হীরা, সুনীত রায়, বলাই হীরা, বীমলসহ আরও অনেকে বলেন, সরকারিভাবে দরিদ্রদের ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হবে এমন কথা জানতে পেরে ইউপি সদস্য হরেন্দ্র নাথ শিকদারের কাছে যাই।
তিনি বলেন ঘর পেতে পাঁচ হাজার টাকা লাগবে। হাতে নগদ টাকা না থাকায় সুদে টাকা এনে মেম্বরকে দেই। দুই বছর হয়ে গেছে ঘরও পাইনি, টাকাও ফেরত পাইনি। দুই বছরে পাঁচ হাজার টাকায় প্রায় আড়াই হাজার টাকা সুদ দিয়েছি। মেম্বরের কাছে টাকা চাইতে গেলে গালিগালাজ করে। মেরে ফেলার হুমকি দেয়। কাজল মণ্ডল, ধীমান, নারায়ণসহ কয়েকজন বলেন, দরিদ্র মানুষের টাকা নিয়ে ইচ্ছে মত খরচ করেছেন মেম্বররা।
এখন টাকা চাইতে গেলে মারধর ও এলাকা থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দেয়। আমরা এই দুর্নীতিবাজ মেম্বরদের বিচার চাই। এ ব্যাপারে ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য হরেন্দ্র নাথ শিকদার বলেন, তারা যে অভিযোগ করেছে তা ভিত্তিহীন। আমি আগামীতে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করব তাই কিছু কুচক্রীমহল এসব অপপ্রচার করছেন। ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য শ্রীবাস রায় বলেন, আমি কোনো অনিয়ম করিনি।
তারা অভিযোগ দিয়েছে। টিএনও সাহেব তদন্ত করে দেখবেন। আপনারাও তদন্ত করে দেখেন। যদি কোনো অনিয়ম হয়ে থাকে আমি যেকোনো শাস্তি মেনে নিব। সন্তোষপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিউটি আক্তার বলেন, আমার কাছেও এ ধরনের অভিযোগ এসেছে। করোনা পরিস্থিতিতে এ বিষয়ে খোঁজ খবর নিতে একটু দেরি হচ্ছে।
চিতলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মারুফুল আলম বলেন, সন্তোষপুর ইউনিয়নের ৪ ও ৫ নম্বর ওয়াডের্র ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। উভয় পক্ষকে নোটিশ করেছি। অভিযোগ প্রমাণিত হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।