চিতলমারীতে কারেন্ট পোকার আক্রমণে দিশেহারা কৃষক

দিশেহারা

বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বোরো ধান পাকার আগ মুহূর্তে ক্ষেতে কারেন্ট পোকার (মৌয়া) আক্রমণ দেখা দিয়েছে। পোকায় আক্রান্ত জমিতে ছাঁই, বালু ও বিভিন্ন কীটনাশক ছিটিয়েও প্রতিকার না পেয়ে কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। স্থানীয় কৃষি বিভাগ কারেন্ট পোকার আক্রমণে ধান চাষিদের আতঙ্কিত না হওয়ার আহবান জানিয়েছেন। সেই সাথে তারা দল বেধে বিভিন্ন ব্লকে গিয়ে পোকার হাত থেকে ধান ক্ষেত রক্ষার জন্য কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছেন।

চিতলমারী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে মোট ২১টি ব্লক রয়েছে। একুশটি ব্লকে এবছর বেরো মৌসুমে ২৮ হাজার ৫২৮ একর জমিতে হাইব্রিড ও ৩৮৩ একর জমিতে উফশী জাতের ধান চাষ হয়েছে। এখানের প্রায় ৩০ হাজার পরিবার এই ধান চাষের সাথে জড়িত। এই ধানের উপর তাদের অর্থনৈতিক মেরুদন্ড অনেকটা নির্ভর করে। প্রথমদিকে আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় এ বছরও ধানের বাম্পার ফলন আশা করা হয়েছিল।

উপজেলার দড়িউমাজুড়ি গ্রামের দিপক বিশ্বাস, সুনিল হীরা, অনিল হীরা, সুমন বৈরাগী, প্রদীপ বৈরাগী, মুকন্দ রায়, দুলাল রায়, হিরণ বাড়ৈ, সঞ্জয় শিকদার, পীযূষ বিশ্বাস, বলাই হীরা, গোবিন্দ মৃধা, অসীম বৈরাগী, রতন ব্যাপারী, চরবানিয়ারী গ্রামের বিপদ ভঞ্জন, পাটরপাড়ার এখলাছ মোল্লা ও কুড়ালতলার আলমীর হোসেনসহ অনেক ধানচাষি প্রায় অভিন্নসুরে বলেন, আমাদের বেশীর ভাগ কৃষকেরই জমি নগদ জমায় নেয়া। এই ধান বিক্রি করে মোটা অংকের টাকা জমির মালিককে দিতে হয়। এ বছর ধানবীজ, সার, কীটনাশক ও কামলার মজুরী দিয়ে অনেক টাকা দেনা হয়েছি। প্রথমদিকে ধান ক্ষেতের অবস্থা দেখে আশায় বুক বেধে ছিলাম। এবার ধানের উৎপাদনে ধারদেনা ঘুচবে। কিন্তু ধান পাকার আগ হঠাৎ মুহূর্তে ক্ষেতে কারেন্ট পোকার (মৌয়া) আক্রমণ দেখা দিয়েছে। গাছ পুড়ে যাওয়ার রং ধারণ করে মরে যাচ্ছে। অনেক ধানের শীষ ঢলে পড়ছে। পোকায় আক্রান্ত জমিতে ছাঁই, বালু ও বিভিন্ন কীটনাশক ছিটিয়েও প্রতিকার না পেয়ে আমরা দিশেহারা হয়ে পড়েছি।

শনিবার (৩ এপ্রিল) দুপুরে উপজেলার দড়িউমাজুড়ি নীল বিশ্বাসের ঘের এলাকা ঘুরে জানা যায়, মাঠে মাঠে মৃদু হাওয়ায় দোল খাচ্ছে ভরা ধানক্ষেত। শিষের ভারে নত ধানগাছ। এসব খেতের কিছু কিছু অংশের ধানগাছ মরে গেছে। অনেক ক্ষেতের উপর দিয়ে পাখি উড়ছে। অনেকে কারেন্ট পোকায় আক্রান্ত জমিতে ছাঁই ও কীটনাশক ছিটাচ্ছে।

এ ব্যাপারে নাম না প্রকাশ করার শর্তে এক কীটনাশক বিক্রতা বলেন, হঠাৎ কারেন্ট পোকার আক্রমনে কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। আমি এ দুইদিনে উপজেলার ডাকাতিয়া, কুড়ালতলা, পাড়রপাড়া, কালিগঞ্জ, দড়িউমাজুড়ি, শ্যামপাড়া, পাঁচপাড়া, খাসেরহাট, গরীবপুর ও টেকেরবাজারসহ বিভিন্ন এলাকার কীটনাশকের দোকানে কারেন্ট পোকার ওষুধ পৌঁছে দিয়েছি।

তবে চিতলমারী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ঋতুরাজ সরকার বলেন, বর্তমান আবহাওয়া কারেন্ট পোকাদের অনুকুলে। তাই উপজেলার কিছু ধানক্ষেতে কারেন্ট পোকার আক্রমণ হয়েছে। কৃষি অফিসের লোকজন দলবেধে বিভিন্ন এলাকায় কাজ করছে। কারেন্ট পোকার আক্রমণে ধান চাষিদের আতঙ্কিত বা ভয় পাওয়ার তেমন কিছু নেই। কারণ বাজারে বিভিন্ন কোম্পানীর কারেন্ট পোকার পর্যাপ্ত কীটনাশক মজুদ আছে।



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked as *