করোনা রোগী মৃত্যু–আতঙ্কে ভোগে। তাঁর পরিবার হয়ে পড়ে হতবিহ্বল। পরিবারের সদস্যদেরও থাকে আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা। এ অবস্থায় তাঁদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন মনোবল অটুট রাখা। অথচ অনেকেই ওই রোগী ও পরিবারকে হেয়প্রতিপন্ন করেন। নানাভাবে মানসিক চাপ দেন। এলাকাছাড়াও করতে চান। এতে মনোবল আরও ভেঙে যায়। এ কারণে মৃত্যু ত্বরান্বিত হতে পারে। করোনা রোগী যেন সামাজিক বঞ্চনার শিকার না হন।
করোনায় আক্রান্তের পর সুস্থ হয়ে ওঠা নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার ২৫ বছর বয়সী যুবক প্রথম আলোর কাছে এভাবেই নিজের অভিজ্ঞতা কথা তুলে ধরেন। তিনি নড়াইল জেলার প্রথম করনা আক্রান্ত রোগী ছিলেন।
নারায়ণগঞ্জে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এই যুবক শ্বাসকষ্ট নিয়ে ৬ এপ্রিল রাতে বাড়িতে আসেন। পরদিন সকালে লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তাঁর নমুনা সংগ্রহ করা হয়। খুলনা মেডিকেল কলেজের ল্যাবে ১৩ এপ্রিল তাঁর নমুনা পরীক্ষার পর করোনা শনাক্ত হয়। এরপর তিনি বাড়িতেই আইসোলেশনে ছিলেন। ১৮ ও ১৯ এপ্রিল পরপর দুদিন তাঁর নমুনা সংগ্রহ করে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবে পাঠানো হয়। দুদিনের পরীক্ষাতেই তাঁর শরীরে করোনা নেগেটিভ পাওয়া যায়। বাড়ির অন্য সদস্যদের নমুনা পরীক্ষা করে কারও শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি।
গতকাল মঙ্গলবার রাতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে অবিবাহিত ওই যুবক প্রথম আলোকে বলেন, তিনি প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা কর্মকর্তা। তাই সব সময়ে ভেতরেই থাকতেন। বাইরে খুব কম গেছেন। এক দিন শুধু একটি বেসরকারি হাসপাতালে গিয়েছিলেন। এরপরও আক্রান্ত হন। তাই কেউই ঝুঁকিমুক্ত নন।
করোনা শনাক্ত হওয়ার পর মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাকে নিয়ে পরিবারের সবাই দুশ্চিন্তায় ছিলেন। পাশাপাশি পরিবারের সদস্যরা আক্রান্ত হন কি না, তা নিয়েও ছিল দুশ্চিন্তা। বাড়িতে একটি পৃথক ভবনে আমি একাই থেকেছি। ওই ভবনে আর কেউ থাকেনি। এখনো একাই সেখানে আছি। আরও সাত দিন চিকিৎসকেরা এভাবে থাকতে বলেছেন। শুধু আমার মা দরজার বাইরে থেকে খাবার দিয়েছেন ও থালাবাটি নিয়ে গেছেন।’
করোনার চিকিৎসা নিয়ে তিনি বলেন, চিকিৎসকদের পরামর্শে তরল ও গরম খাবার খেয়েছেন। ঠান্ডা কিছু স্পর্শই করেননি। বিশেষ করে বারবার গরম পানি খেয়েছেন, গরম পানি দিয়ে গোসল করেছেন আর গরম ভাপ নাকে ও মুখে নিয়েছেন। কদিনে ফলমূল খেয়েছেন। লোহাগড়া হাসপাতালের (উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স) চিকিৎসকদের প্রেসক্রিপশনে ওষুধ খেয়েছেন। উপসর্গ তেমনটি ছিল না। হালকা শ্বাসকষ্ট ছিল। এখন কোনো সমস্যা নেই।
ওই যুবক বলেন, ‘হাসপাতালের চিকিৎসক এবং পুলিশ সদস্যরা আমার ও পরিবারের সঙ্গে সব সময়ে যোগাযোগ রেখেছেন। জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, সিভিল সার্জন, ইউএনও, ওসি, রাজনৈতিক নেতা, জনপ্রতিনিধি, স্বেচ্ছাসেবীরা বারবার যোগাযোগ করেছেন, সাহস দিয়েছেন। সর্বোপরি সাংসদ মাশরাফি বিন মুর্তজা প্রতিদিনই আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। উৎসাহ দিয়েছেন, সাহস জুগিয়েছেন। প্রয়োজনে যেকোনো হাসপাতালে ভর্তি করার আশ্বাস দিয়েছেন।
এতে আমার ও পরিবারের সদস্যদের মনোবল বেড়ে যায়।’
লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শরীফ সাহাবুর রহমান বলেন, ‘কোরোনাভাইরাসের সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। তাই জ্বর, ঠান্ডা ও শ্বাসকষ্টের লক্ষণ অনুযায়ী ওষুধ দেওয়া হয়েছিল। সর্বোপরি তাঁর মনোবল বাড়াতে আমরা চেষ্টা করেছি।’