ডা. পেরু গোপাল বিশ্বাস, পিএইচডি ক্যান্ডিডেট, ইয়াতে বিশ্ববিদ্যালয়, জাপান।
দেশে করোনাভাইরাস (COVID-19) আক্রান্তের সংখ্যা ৮0 হাজার অতিক্রম করেছে। বাস্তব সংখ্যাটা হয়তো এর থেকে অনেক বেশ। দেশের টেস্টের সক্ষমতা, পারিপার্শ্বিক অবস্থা, জনসাধারণ সহ সকলের উদাসীনতা, চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা ইত্যাদি বিষয়গুলি বিবেচনায় নিলে, ভবিষ্যতে আমাদের জন্য যে, কি অপেক্ষা করছে, তা আমি ভাবতেই পারছিনা? পরিসংখ্যান বলছে মৃত্যুর হার, অনেক কম। বাস্তবে আমরা কি, মৃত্যুর পরিসংখ্যানটি সঠিক ভাবে হিসাব করতে পারছি? ধরা যাক আজ আক্রান্তের সংখ্যা ২৯০০, মৃত্যু ৪১ জন, মৃত্যুর হার ১.৪%, এই মৃত ব্যক্তিরা কি আজকের আক্রান্তদের মধ্যে থেকে মারা গেছে, অবশ্যই না, মৃত ব্যক্তিরা পূর্বে আক্রান্ত হওয়া। অর্থাৎ আমরা সঠিকভাবে মৃত্যুর হারের পরিসংখ্যান দিতে পারছিনা। মৃতের সংখ্যা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, আমরা কি এটা বলতে পারি? বর্তমানে আমি করোনাভাইরাস এর জন্য নিরাপদ দেশ, জাপানে অবস্থান করলেও, আমার বাবা-মা, শিক্ষকমন্ডলী, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, সহকর্মী, সহযোদ্ধা, পরিচিত ইত্যাদিদের জন্য আমি উদ্বিগ্ন। এদের কাউকে বা এমনকি দেশের কাউকেই, আমি করোনাভাইরাস এ হারাতে চাইনা। আমাদের সম্পদের স্বল্পতা ও সার্বিকভাবে বিভিন্ন ব্যবস্থার অপ্রতুলতার রয়েছে। তাই, আবেগ দিয়ে নয়, বিবেক দিয়ে এবং একাত্তরের চেতনা ব্যবসায়ী নয়, একাত্তরের চেতনা পালনকারী হয়ে, করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় পদক্ষেপ গ্রহণ করলে, আমরা হয়তো করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় সফল হব।
বিশ্বে বর্তমানে করোনাভাইরাস (COVID-19) এর জন্য, WHO একটি অনিরাপদ ও অনির্ভরশীল প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে । WHO এর তথ্য-উপাত্ত, নির্দেশনা ইত্যাদির উপর পুরোপুরি নির্ভরশীল না হয়ে, নির্ভরযোগ্য (peer reviewed journal) বৈজ্ঞানিক জার্নাল ও বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে, করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে। স্বনামধন্য বৈজ্ঞানিক জার্নাল Antiviral Research, Naun-Schmiedeberg’s Archives of Pharmacology, The Journal of Antibiotices ইত্যাদিতে প্রকাশিত প্রবন্ধের উপর ভিত্তি করে, ভাইরাস নিষ্ক্রিয় করনে Ivermectin এর মেকানিজম, সহজ ভাষায় সাধারণের বোঝার উপযোগী করে লেখার চেষ্টা করেছি। (লেখার নিচে মূল বৈজ্ঞানিক জার্নাল এর লিংক দেয়া আছে (1-5), বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন)। করোনা ভাইরাস মানুষের শরীরে প্রবেশের পর, সাইটোপ্লাজম এর Importin α/β1 heterodimer এর সাথে করোনা ভাইরাস এর কার্গো প্রোটিন অংশ যুক্ত হয়ে কমপ্লেক্স তৈরি করে এবং একই সাথে করোনা ভাইরাস, পোষকের কোষের ভাইরাস প্রতিরোধী ব্যবস্থা নষ্ট করে দেয়। এরপর Importin α/β1 heterodimer-করোনা ভাইরাস কমপ্লেক্স Nuclear pore complex (নিউক্লিয়াসের দরজা স্বরূপ) এর মধ্য দিয়ে কোষের প্রধান উপাদান নিউক্লিয়াসে প্রবেশ করে, ভাইরাস পোষকের নিউক্লিয়াসের কর্তৃত্ব গ্রহণ করে। ফলশ্রুতিতে রোগের প্রকোপ দেখা দেয়। Importin α/β1 heterodimer সাথে কমপ্লেক্স তৈরি করা ব্যতীত, করোনাভাইরাস নিউক্লিয়াসের নিকট পৌঁছাতে পারে না। Importin α/β1 heterodimer -করোনা ভাইরাস কমপ্লেক্স তৈরি করা বন্ধ করতে পারলেই, করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ করা সম্ভব। যদি আইভারমেক্টিন গ্রহণ করা হয়, তখন Importin α/β1 heterodimer-আইভারমেক্টিন কমপ্লেক্স তৈরি করে, করোনা ভাইরাস Importin α/β1 heterodimer এর সাথে কমপ্লেক্স তৈরি করতে পারেনা এবং কোষের ভাইরাস প্রতিরোধী ব্যবস্থা ও নষ্ট করতে পারেনা এবং করোনাভাইরাস নিউক্লিয়াসের নিকট ও পৌঁছাতে পারে না। ফলস্বরূপ কোষের ভাইরাস প্রতিরোধী ব্যবস্থা করোনা ভাইরাসকে ২৪ থেকে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে।
এই মেকানিজম টি সহজ ভাবে বোঝার জন্য আমি একটি রম্য গল্পের অবতারণা করেছি। ধরা যাক একজন মন্ত্রী (নিউক্লিয়াস) আছেন, মন্ত্রীর এপিএস (Importin α/β1 heterodimer) সঙ্গে গেলেই শুধুমাত্র কোন ব্যক্তি মন্ত্রীর ঘরের প্রবেশ দরজা (Nuclear pore complex) দিয়ে, ঘরে প্রবেশ করে, উনার সাথে সাক্ষাৎ করতে পারেন। অর্থাৎ এপিএসের (Importin α/β1 heterodimer) সঙ্গে না গিয়ে কেউই মন্ত্রীর (নিউক্লিয়াস) সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারেন না। হঠাৎ একদিন কালু মিয়া (করোনাভাইরাস) নামে একজন কুখ্যাত সন্ত্রাসী এসে, ছলনার আশ্রয় নিয়ে, মন্ত্রীর এপিএস (Importin α/β1 heterodimer) এর সঙ্গে বন্ধুত্ব করে, এপিএস এর সঙ্গী (Importin α/β1 heterodimer -করোনা ভাইরাস কমপ্লেক্স) হয়ে, মন্ত্রীর ঘরে, প্রবেশের বিশেষ দরজা (Nuclear pore complex) দিয়ে মন্ত্রীর (নিউক্লিয়াস) নিকট পৌঁছে। এরপর কুখ্যাত সন্ত্রাসী কালু মিয়া (করোনাভাইরাস), মন্ত্রীকে (নিউক্লিয়াস) খুন করে, নিজেই মন্ত্রী সেজে, নিজের কাজ শুরু করে। অন্যদিকে কুখ্যাত সন্ত্রাসী কালু মিয়া (করোনাভাইরাস) এর আসার (Corona test positive) খবর পেয়ে, এপিএস এর সঙ্গে একজন কমান্ডো যুক্ত (Importin α/β1 heterodimer-আইভারমেক্টিন কমপ্লেক্স ) করা হতো, তবে এপিএসের (Importin α/β1 heterodimer) সঙ্গে কুখ্যাত সন্ত্রাসী কালু মিয়া (করোনাভাইরাস) বন্ধুত্ব করতে পারতোনা, বিশেষ দরজা (Nuclear pore complex) দিয়ে প্রবেশ করে মন্ত্রীর (নিউক্লিয়াস) সঙ্গে, সাক্ষাৎও করতে পারত না I মন্ত্রী অক্ষত থাকতেন, একই সাথে মন্ত্রীর নিরাপত্তারক্ষীরা 24 থেকে 48 ঘণ্টার মধ্যে কুখ্যাত সন্ত্রাসী কালু মিয়া (করোনাভাইরাস) কে শেষ করে দিত। (লেখার নিচে মূল বৈজ্ঞানিক জার্নাল এর লিংক দেয়া আছে (রেফারেন্স-১,২,৩), বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন)
আমি আমার পিতামাতা, শিক্ষকমন্ডলী, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু বান্ধব, সহকর্মী, সহযোদ্ধা, পরিচিত জনদের জন্য ICU, অক্সিজেনতো দূরের কথা, বর্তমান প্রেক্ষাপটে ইনস্টিটিউশনাল টেলিমেডিসিনের কথাও আশা করতে পারছিনা । ইতিমধ্যে আমরা সাবেক মন্ত্রী, সাংসদ, শিক্ষক, চিকিৎসক, কৃষিবিদ, উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা, পুলিশ, নার্সসহ অনেক গুনিজনকে হারিয়েছি। দেশের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারকগনের বক্তব্যেও হতাশার বাণী । গভীর সমূদ্রে মানুষ পড়ে গেলে, ছোট ডাল পেলেও আকড়ে ধরে বাচার চেষ্টা করে । যেখানে Ivermectin এবং GR Covid19 এন্টিজেন এন্ট্রিবডি টেস্ট কিট রীতিমতো জাহাজ । আইভারমেকটিন (broad spectrum) কৃমি, ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ইত্যাদির উপর কাজ করে। Ivermectin এর উপর গবেষণার জন্য ২০১৫ সালে নোবেল পুরষ্কার প্রদান করা হয়েছিল।
Ivermectin একটি নিরাপদ ও বিশ্বব্যাপী অনুমোদিত ওষুধ। বাংলাদেশে বিভিন্ন কোম্পানির তৈরি, Ivermectin (6 এবং 12 mg) ওষুধ কম মূল্য বাজারে রয়েছে। গবেষণা অনুসারে Covid-19 এর জন্য single dose (একটি) ই যথেষ্ট। অনেকেই প্রশ্ন তুলতে পারেন, করোনার (Covid-19) চিকিৎসায় Ivermectin ব্যবহার করতে পারব কি না? করোনা আক্রান্ত রোগিদের জন্য প্যারাসিটামল, এন্টিবায়োটিক (Secondary bacterial infection প্রতিরোধের জন্য), এন্টিহিস্টামিন, ভিটামিন সি, জিংক ইত্যাদি ওষুধ ব্যবহার এর জন্য কি, রেজিস্টার্ড চিকিৎসকগন কারোর অনুমতি নেন কি? অন্য Supportive ওষুধের মতোই Ivermectin ব্যবহার করতে পারেন। পেরু ও বলিভিয়া তে Ivermectin করোনার (Covid-19) চিকিৎসায় ব্যবহার করা হচ্ছে (রেফারেন্স- 6, 7)। আমাদের দেশেও ডা: তারেক আলম স্যার করোনার (Covid-19) চিকিৎসায় Ivermectin ব্যবহার করে সফল হয়েছেন বলে, দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংবাদপত্রের মাধ্যমে জেনেছি। এছাড়া আমেরিকার FAD হতে বলা হয়েছে ভেটেরিনারির ব্যবহারের জন্য তৈরিকৃত Ivermectin করোনার (Covid-19) চিকিৎসায় ব্যবহার করা যাবে না, তবে মানুষের জন্য তৈরিকৃত Ivermectin করোনার (Covid-19) চিকিৎসায় ব্যবহার করা যাবে (রেফারেন্স- 8), Ivermectin এর নিরাপদ মাত্রা (safety index – high) বেশি হওয়ায়, side effect খুবই কম (কিছু ক্ষেত্রে ক্ষুধামন্দা, ডায়রিয়া, বমি ইত্যাদি দেখা দিতে পারে)। তবে পাঁচ বছরের নিচে ও 15 কেজির নিচের বাচ্চাদের Ivermectin ব্যবহার করা যাবে না (রেফারেন্স – 9)। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের জন্য, কৃমিনাশক হিসেবে সারাবিশ্বে, Ivermectin বহুলভাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত নন এমন ব্যক্তি, Ivermectin গ্রহণ করলে, করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ করবে কিনা, এ সম্পর্কে এখন পর্যন্ত, কোন গবেষণা প্রবন্ধ নেই।
করোনাভাইরাস (COVID 19) মোকাবেলায় সবার আগে দরকার, আক্রান্ত রোগী সনাক্তকরণ। দেশে যে হারে করোনা রোগী আছে, তাতে করে আক্রান্ত রোগী সনাক্তকরণ এ, প্রখ্যাত বিজ্ঞানী ড. বিজন কুমার শীল ও তার দল উদ্ভাবিত GR COVID 19 এন্টিবডি এন্টিজেন সমন্বিত কিট এর কোন বিকল্প নেই (GR COVID 19 এন্টিবডি এন্টিজেন সমন্বিত কিট, কেন করোনাভাইরাস (COVID 19) আক্রান্ত রোগী সনাক্তকরণ এ গুরুত্বপূর্ণ, তা জানতে ভিজিট করুন টীকা এর লিংক-1)। প্রত্যেকটি এলাকা ধরে, GR COVID 19 টেস্ট কিট দিয়ে, ব্যাপক হারে পরীক্ষা করে, আক্রান্ত রোগী সনাক্ত করে, Ivermectin ও এন্টিবায়োটিক ((Secondary bacterial infection প্রতিরোধের জন্য) – সম্পূর্ণ ডোজ) দিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারলে, বৈজ্ঞানিক পেপার অনুসারে করোনাভাইরাস (COVID 19) মোকাবেলায় হয়তো সফল হওয়া যাবে I (N.B: অবশ্যই, রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসারে ঔষধ গ্রহণ করবেন I)
বাংলাদেশের মানুষের সর্বশেষ আশা ভরসার স্থল, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট প্রার্থনা, দয়া করে, প্রত্যেকটি এলাকা ধরে, GR COVID 19 টেস্ট কিট দিয়ে ব্যাপক হারে করে, আক্রান্ত রোগী সনাক্তকরণ এবং Ivermectin ও এন্টিবায়োটিক ((Secondary bacterial infection প্রতিরোধের জন্য) – সম্পূর্ণ ডোজ) দিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে, করোনা ভাইরাস (COVID 19) মোকাবেলা করুন।