বিশিষ্ট সাংবাদিক , কলামিষ্ট , বাম রাজনীতির পুরোধা , মুক্তিযোদ্ধা,লেখক নির্মল সেনের ৯০ তম জন্মদিন আজ সোমবার। ১৯৩০ সালের ৩ আগষ্ট তিনি গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার দিঘীরপাড় গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তার বাবার নাম সুরেন্দ্রনাথ সেন গুপ্ত । মাতার নাম লাবন্য প্রভা সেন গুপ্ত। পাঁচ ভাই ও তিন বোনের মধ্যে নির্মল সেন পঞ্চম । নির্মল সেনের পিতা সুরেন্দ্র নাথ সেন গুপ্ত কোটালীপাড়ার শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীট কোটালীপাড়া ইউনিয়ন ইনষ্টিটিউশনের গনিত শিক্ষক ছিলেন।
এর আগে সুরেন্দ্র নাথ সেন গুপ্ত ঢাকার ইষ্ট বেঙ্গল ইনষ্টিটিউটে শিক্ষকতা করতেন। দেশ বিভক্তির পরে নির্মল সেনের পিতা মাতা অন্য ভাই বোনদের সঙ্গে নিয়ে কলকাতা চলে যান। জন্মভূমির প্রতি অকুন্ঠ ভালবাসার কারণে তিনি এদেশে থেকে যান। নির্মল সেন বড় হয়েছেন ঝালকাঠি জেলায় তার পিসির বাড়ীতে। তিনি ঝালকাঠি জেলার কলসকাঠি বিএম একাডেমি থেকে ১৯৪৪ সালে মাত্র ১৪ বছর বয়সে ম্যাট্রিক পাস করেন। পিসির বাড়ীতে যাওয়ার আগে নির্মল সেন গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার জিটি স্কুলে ৪র্থ শ্রেণিতে এক বছর লেখা পড়া করেন। তিনি বরিশাল বিএম কলেজ থেকে আইএসসি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি এ ও মাষ্টার্স পাস করেন। নির্মল সেনের স্কুল জীবনে ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনের মাধ্যমে রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় । কলেজ জীবনে তিনি অনুশিলন সমিতির সক্রিয় সদস্য ছিলেন। পরবর্তিতে তিনি আর এস পিতে যোগ দেন।
তিনি ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক ছিলেন।আর পর তিনি দীর্ঘ দিন তিনি শ্রমিক কৃষক সমাজবাদী দলের সাধারন সম্পাদক ছিলেন। রাজনীতি করতে গিয়ে নির্মল সেনকে জীবনের অনেকটা সময় জেলে কাটাতে হয়েছে। ১৯৬১ সালে দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার মধ্যে দিয়ে নির্মল সেন তার সাংবাদিক জীবন শুরু করেন। তার পর দৈনিক আজাদ , দৈনিক পাকিস্তান , দৈনিক বাংলা পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেন। তিনি বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ছিলেন। এ ছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিষয়ে অতিথি শিক্ষক হিসেবে শিক্ষকতা করেছেন।
লেখক হিসেবেও নির্মল সেনের যথেষ্ট সুনাম রযেছে। তার লেখা পূর্ব পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ , মানুষ সমাজ রাস্ট্র , বার্লিন থেকে মষ্কো , মা জন্মভূমি , স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই ,আমার জীবনে ৭১এর যুদ্ধ, আমার জবান বন্ধি উল্লেখ যোগ্য । নির্মল সেন ২০০৩ সালে ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। এর পর দেশে বিদেশে অনেক চিকিৎসার পরে ২০১৩ সালে ৮ জানুয়ারি পরলোকগমন করেন। নির্মল সেনের শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী তার মরদেহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে দান করা হয়েছে। নির্মল সেনের ভাতিজা সাংবাদিক রতন সেন কংকন বলেন- করোনার কারনে এ বছর ‘নির্মল সেন স্মৃতি সংসদ’ ছোট পরিসরে জেঠুর জন্মদিন পালনের উদ্যোগ নিয়েছে।